ঘর গোছানোর বাজেট
ঘরের একটি অংশ নাকি পুরোটা ডিজাইনারের পরামর্শ অনুযায়ী সাজাবেন, তা ঠিক করে নিন। ঘরের জন্য পার্টিকেল বোর্ড ব্যবহার করলে খরচ কম। তবে সেগুন, গর্জন বা মেহগনি বোর্ডের স্থায়িত্ব বেশি বলে এক্ষেত্রে ঘর সাজানোর ব্যয়ও বেশি।
ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে ইন্টেরিয়রে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় না করলেও চলে। একটু বুদ্ধি খাটাতে অথবা অভিজ্ঞ কোনো ইন্টেরিয়র ডিজাইন প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ নিতে পারেন। ছোট ঘরে ঠিক কোন মাপের সোফা রাখলে ভালো হবে কিংবা ডাইনিং টেবিলটির আকার ও আয়তন কী হবে, এ বিষয়গুলো একটু সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করলেই ঘরের সাজ বদলে ফেলা যায়; ছোট ঘরও হয়ে ওঠে মনের মতো বিশাল, বিস্তৃত।
নিজের ঘরটি সাজাতে পরামর্শের জন্য শরণাপন্ন হতে পারেন ইন্টেরিয়র ডিজাইন করে এমন কোনো পেশাদারের। ঘরের একটি অংশ নাকি পুরোটা ডিজাইনারের পরামর্শ অনুযায়ী সাজাবেন, তা ঠিক করে নিন। তাছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বাজেট। ফার্মের ক্যাটালগ দেখে সে অনুযায়ী ঘর সাজাতে চাইলে ডিজাইন আর সুপারভিশন ব্যয় মিলে খরচ পড়বে ৪-৫ লাখ টাকা। এর সঙ্গে যদি ফ্লোরের ইন্টেরিয়র করেন তাহলে খরচ দাঁড়াবে ৭ থেকে ৯ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ইন্টেরিয়র ফার্মটি ঘর সাজানোর প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করবে। আপনি যদি কেবল তাদের ডিজাইন ব্যবহার করে নিজেই ঘর সাজানোর সরঞ্জাম জোগান দেন তাহলে খরচ পড়বে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা।
ধরুন, আপনার ঘরটি ১ হাজার ২০০ বর্গফুটের। এক্ষেত্রে ইন্টেরিয়র বাজেট শুরু হয় ৪-৫ লাখ টাকা দিয়ে। এর পর যত বেশি বৈচিত্র্যের ছোঁয়া আনতে চাইবেন, খরচপাতি সে অনুযায়ী বাড়বে।
বনানীতে অবস্থিত আয়না ইন্টেরিয়র ফার্মের ডিজাইনার মোহাম্মদ আরিফ আহমেদ জানান, ‘জায়গার স্বল্পতার কারণে এখন আমরা ঘরে বড়সড় আকারের আসবাব রাখতে চাই না। ছোট পরিসরে একটু গুছিয়ে থাকতে চাই। আর এক্ষেত্রে ইন্টেরিয়র চার্জ খুব একটা পড়ে না। ৫-৬ লাখ টাকার মতো খরচ হয়। তবে কেউ যদি সাজসজ্জার উপকরণ পরিবর্তন করেন, ইন্টেরিয়রে কাঠের কিংবা পেইন্টিংয়ের ব্যবহার বেশি থাকে তাহলে বেশি টাকা ব্যয় করতে হবে।’
কোনো ইন্টেরিয়র ফার্ম থেকে সম্পূর্ণ ফ্ল্যাট ডিজাইন না করিয়ে আপনি যদি একটি রুম ডিজাইন করাতে চান, তাহলে খেয়াল রাখবেন বাজেট নিয়ে। কারণ একটি রুমের ডিজাইনের জন্যও জিনিসপত্রের পরিবহন ব্যয়সহ যাবতীয় খরচ ইন্টেরিয়র ফার্মটি চার্জ করে। কাজেই কাজের পরিসর ছোট হলে কিন্তু সার্ভিস চার্জ বেড়ে যায়।
ঘরের সাজের জন্য প্লেইন পার্টিকেল বোর্ড ব্যবহার করলে খরচ কম হয়। তবে সেগুন, ওক ভিনিয়ার বোর্ডের স্থায়িত্ব বেশি বলে এক্ষেত্রে ঘর সাজানোর ব্যয়ও বেশি। কাঠের মতো দেখতে বলে এর জনপ্রিয়তা রয়েছে।
তবে ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে ক্রেতাদের ঝোঁক পার্টিকেল বোর্ডের দিকেই। কারণ এখন কেউ একটা আসবাব ১০ বছরের বেশি ব্যবহার করতে চান না। তাছাড়া কিছু দিন পর পর ঘর সাজানোর ধারণায় পালাবাদল-রূপান্তর হচ্ছে বলে স্থায়ী ডিজাইনের দিকে কম লোকই ঝুঁকছেন।
বাসস্থানে যারা আভিজাত্যের জৌলুস আনতে চান, তারা মেঝেতে কাঠের কৃত্রিম মেঝে ব্যবহার করতে পারেন। কেউ যদি এ ধরনের মেঝের চিন্তা করেন, তাহলে বাড়ির নির্মাতা অথবা প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানকে আগে থেকে বলে রাখতে হবে যেন আপনার ঘরের মেঝেতে টাইলস ব্যবহার না করে। কারণ একবার টাইলস লাগানো হয়ে গেলে, সেটা পরিবর্তন করা চাট্টিখানি কথা নয়। তাছাড়া খরচও দ্বিগুণ বেড়ে যায়। তাই আগে থেকে পরিকল্পনা করে নেয়াই যুক্তিযুক্ত। সাধারণ উডেন ফ্লোরের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ব্যয় হয় ন্যূনপক্ষে ৩০০ টাকা। ধরুন আপনার ফ্ল্যাটটি ১ হাজার ২০০ বর্গফুটের। তাহলে মোট খরচ পড়বে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। একটু ভালো মানের উডেন ফ্লোরের জন্য প্রতি বর্গফুটের খরচ পড়বে ৫০০-৫৫০ টাকা। এর স্থায়িত্ব পাঁচ থেকে ১০ বছর। তবে যদি সত্যিকার উডেন ফ্লোর ব্যবহার করতে চান, তাহলে প্রতি বর্গফুট বাবদ গুনতে হবে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা।
জনপ্রিয়তা রয়েছে উডেন মেটালের কাজেরও। টেরাকোটার সঙ্গে মিলিয়ে দেয়ালে করা যেতে পারে উডেন মেটালের দুটি আর্ট ওয়ার্ক। একটু বেশি নান্দনিকতার ছোঁয়া ও ভারিক্কি ভাব আনতে টেরাকোটায় ব্যবহার করতে পারেন মেটাল বা পিতল।
সূত্র: বণিক বার্তা